ন্যায়বিচার নয়, দেশে এখন ‘নাই বিচারের’ পরিবেশ: খালেদা জিয়া
ডিটেকটিভ নিউজ ডেস্ক
জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট দুর্নীতি মামলায় আদালতে আত্মপক্ষ সমর্থনের পঞ্চম দিন গতকাল বৃহস্পতিবার খালেদা জিয়া বলেছেন, দেশে বিচার ব্যবস্থার বর্তমান পরিস্থিতিতে ন্যায়বিচার পাবেন কি না- তা নিয়ে তিনি শঙ্কিত। প্রসঙ্গে প্রধান বিচারপতির পদ থেকে এস কে সিনহার পদত্যাগের বিষয়টি টেনে বিএনপি চেয়ারপারসন বলেছেন, শাসক মহলের বেপরোয় কর্মকা-ে দেশে এখন ন্যায়বিচারের বদলে সৃষ্টি হয়েছে নাই বিচারের পরিবেশ। ঢাকার বকশীবাজারে গতকাল বৃহস্পতিবার ঢাকার পঞ্চম বিশেষ জজ আদালতে প্রায় এক ঘণ্টার বক্তব্যে খালেদা জিয়া বলেন, আমার আশঙ্কার জায়গা হচ্ছে- দেশে ন্যায়বিচারের পরিবেশ ও সুযোগ তারা (সরকার) ধ্বংস করে দিয়েছে। কাজেই আদালতের কাছে আমি ন্যায়বিচার পাব কী না- সেই সংশয় নিয়েই এ মামলায় আমাকে জবানবন্দি দিতে হচ্ছে। পঞ্চম দিনেও আত্মপক্ষ সমর্থনে খালেদার বক্তব্য শেষ হয়নি। তার আবেদনে বিচারক মো. আখতারুজ্জামান ২৩ নভেম্বর পর্যন্ত শুনানি মুলতবি করেন। খালেদা জিয়ার বিরুদ্ধে জিয়া দাতব্য ট্রাস্ট মামলাও ওই দিন একই আদালতে শুনানির জন্য উঠবে। সাবেক প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়া দুই কোটি ১০ লাখ টাকা আত্মসাতের এ মামলায় আত্মপক্ষ সমর্থন করে নিজের বক্তব্য উপস্থাপন শুরু করেন গত ১৯ অক্টোবর। সেদিন তিনি দাবি করেন, জিয়া এতিমখানা ট্রাস্টে এতিমদের জন্য আসা একটি টাকাও তছরুপ বা অপচয় করা হয়নি, তা ব্যাংকে গচ্ছিত রয়েছে। এরপর ২৬ অক্টোবর আত্মপক্ষ সমর্থনের দ্বিতীয় দিনে তিনি বলেন, তার বিরুদ্ধে এ মামলা ‘ভুয়া, রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত’। ২ নভেম্বর আত্মপক্ষ সমর্থন করে তৃতীয় দিনে খালেদা বলেন, রাজনৈতিক অঙ্গন থেকে তাকে ‘সরাতে নির্বাচনে অযোগ্য ঘোষণা করার নীলনকশা’ বাস্তবায়ন করছে ক্ষমতাসীনরা। আর ১১ নভেম্বর তিনি বলেন, বাংলাদেশে বিচারকরা স্বাধীনভাবে আইন মেনে বিচার করতে পারেন কি না, তার এ মামলার রায়েই তার প্রমাণ আসবে। গতকাল বৃহস্পতিবার বক্তব্য দিতে উঠেও দেশের বিচার বিভাগের পরিস্থিতি এবং প্রধান বিচারপতি এস কে সিনহার পদত্যাগের প্রসঙ্গে কথা বলেন খালেদা জিয়া। তিনি বলেন, আমরা সংবাদপত্রসহ বিভিন্ন মাধ্যম থেকে জেনেছি, প্রধান বিচারপতি থাকা অবস্থায় এস কে সিনহাকে অসুস্থ ঘোষণা করে ন্যক্কারজনকভাবে জোর করে ছুটিতে এবং দেশের বাইরে যেতে বাধ্য করা হয়। পরবর্তীতে দেশে না ফিরে পদত্যাগ করতে তাকে বিশেষ পন্থায় ভয়-ভীতি দেখিয়ে বাধ্য করা হয়েছে। ক্ষমতাসীনদের ‘পছন্দের রায় না দেওয়ার কারণে’ প্রধান বিচারপতির এমন ভাগ্য বরণ করতে হয়েছে মন্তব্য করে বিএনপি চেয়ারপারসন বলেন, সেখানে অন্য বিচারকদের সামনে ন্যায়বিচারের সুযোগ ও পরিবেশ কি আর থাকতে পারে? এই পরিস্থিতিতে দেশের বিচার ব্যাবস্থার উপর জনগণের কতটা আস্থা থাকতে পারে? খালেদা আদালতে বলেন, তার বিরুদ্ধে এ পর্যন্ত ৩৬টি মামলা হয়েছে। ‘রাজনৈতিক প্রতিহিংসা থেকেই’ যে এসব মামলা করা হয়েছে- তা ‘জনগণের কাছে স্পষ্ট’। সবগুলো মামলাই অসত্য ও ভিত্তিহীন অভিযোগের ভিত্তিতে করা হয়েছে। আমি রাজনীতিতে সক্রিয় বলেই, ক্ষমতাসীনরা আমাকে সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ হিসেবে বিবেচনা করে বলেই এ মামলাগুলো করা হয়েছে। অথচ শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে হওয়া দুর্নীতির মামলাগুলো তুলে নেওয়া হয়েছে। বিএনপিনেত্রীর দাবি, ক্রমাগত ‘অপপ্রচার’ চালিয়েও জনগণকে তার কাছ থেকে বিচ্ছিন্ন করতে ব্যর্থ হয়েই ক্ষমতাসীনরা ‘মিথ্যা মামলার’ আশ্রয় নিয়েছে। এসব মামলার উদ্দেশ্য হচ্ছে আমাকে হেনস্তা করা এবং জনগণের সামনে হেয় করা। কিন্তু তাদের এই উদ্দেশ্য সফল হয়নি, হবেও না। বরং এসব করে তারাই জনগণের কাছে হেয় হচ্ছে, বিচ্ছিন্ন হচ্ছে। খালেদা বলেন, অসত্য ভিত্তিহীন অভিযোগে দায়ের করা মোকদ্দমায় আমি ভীত নই। তবে দেশবাসী এবং আমার আশঙ্কার কারণ অন্য জায়গায়- সেটা হচ্ছে অত্যন্ত সুপরিকল্পিত ও ন্যক্কারজনকভাবে দেশ থেকে ন্যায়বিচারের পরিবেশ ও সুযোগ বিলুপ্ত করা হয়েছে। শাসকদল তাদের অপকর্ম ও অসৎ উদ্দেশ্য হাসিলের জন্য সবরকমের কারসাজির আশ্রয় গ্রহণ করেছেন। বিচার বিভাগকে সম্পূর্ণ আতঙ্কগ্রস্ত করে ফেলা হয়েছে। সে কারণে অনেকেই বলছেনৃ দেশে সুবিচার ও ন্যায়বিচারের কোনো সুযোগ ও পরিবেশ আজ আর নেই। মামলা প্রসঙ্গে খালেদা বলেন, জিয়া দাতব্য ট্রাস্ট বা এতিমখানা ট্রাস্টে কোনো পদে তিনি ছিলেন না। অনুদানের অর্থ আনা বা বিতরণের সঙ্গেও ব্যক্তিগতভাবে বা প্রধানমন্ত্রী হিসেবে তার কোনো রকম সংশ্লিষ্টতা ছিল না। ট্রাস্টের কেউ কোনো সরকারি কর্মকর্তা বা কর্মচারী নন। ট্রাস্টের কেউ কোনো অনিয়ম বা আইন অমান্য করলে তার ব্যাপারে ট্রাস্ট আইনে অভিযোগ বা মামলা হতে পারে। কিন্তু দুদক কীভাবে ট্রাস্টের কথিত অনিয়ম ও দুর্নীতির ব্যাপারে মামলা করে? এটা কী তাদের আওতা বা এখতিয়ারে পড়ে? তাছাড়া এখানে কোনো রকম দুর্নীতিও হয়নি। এই মামলায় আমাকে কেন অভিযুক্ত করা হয়েছে তাও আমার বোধগম্য নয়। আদালতে খালেদা জিয়ার অসমাপ্ত জবানবন্দি শোনার আগে জিয়া দাতব্য ট্রাস্ট মামলার তদন্ত কর্মকর্তা হারুন অর রশিদকে জেরা করেন আসামিপক্ষের আইনজীবী আমিনুল ইসলাম। পরে খালেদা জিয়ার আত্মপক্ষ সমর্থনের বাকি বক্তব্য শোনার জন্য ২৩ নভেম্বর দিন ঠিক করে দেন বিচারক। এতিমদের জন্য বিদেশ থেকে আসা টাকা আত্মসাতের অভিযোগে ২০০৮ সালের ৩ জুলাই রমনা থানায় এ মামলা দায়ের করে দুদক। তদন্ত শেষে ২০০৯ সালের ৫ অগাস্ট তদন্ত কর্মকর্তা আদালতে অভিযোগপত্র দেন। তার পাঁচ বছর পর ২০১৪ সালের ১৯ মার্চ ঢাকার তৃতীয় বিশেষ জজ অভিযোগ গঠন করে খালেদাসহ ছয় আসামির বিচার শুরু করেন।